সাদা পাঞ্জাবী, চোখে চশমা,চুলগুলো উসকো খুসকো – এমন একটি অনার্স পড়ুয়া ছেলে আজ হাজির হয়েছে এফ এম রেডিও “রেডিও হাঙ্গামা” তে।চোখে মুখের দিকে তাকালে মনে হয় হাজারো রাত জেগে জেগে মুখটাকে শুকনো ফুলের মত করে ফেলেছে। চোখের দিকে আরেকটু সুনজর দিয়ে তাকালে মনে হয় তার চোখের ভেতর হাজারো কষ্টের ফেরীওয়ালা কষ্ট ফেরী করার বদলে কষ্ট ক্রয় করছে। ঠিক রাত দশটায় শুরু হবে রেডিও হাঙ্গামার জনপ্রিয় শো “শুধুই ভালবাসা”। আর ভদ্রলোক এই জন্যই ৪০ মিনিট আগে এসে হাজির হয়েছেন রেডিও হাঙ্গামার অফিসে।কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর দেখলেন আরজে রিচি,আরজে শান্ত উপস্থিত হয়েছেন। তাদের সাথে পরিচিত হলেন সে। শো শুরু হওয়ার আর মাত্র কিছুক্ষন বাকী। শো শুরু করার সকল প্রস্তুতি শেষ ।যথারীতি ১০ টায় শুরু হল।
রিচিঃ হেলো বন্ধুরা!!! ঘড়ির কাঁটা বলছে ঠিক ১০ টা বাজে এবং আমরা চলে এসেছি আপনাদের সাথে গল্প করার জন্য এবং গল্প শোনানোর জন্য রেডিও হাঙ্গামার জনপ্রিয় শো “শুধু ভালবাসা” অনুষ্ঠানে। সাথে আছি আমি আরজে রিচি ...
শান্ত ঃ এবং সাথে আছি আমি শান্ত !
রিচিঃপ্রতি সপ্তাহের মত আকর্ষনীয় একটি সত্যিকারের প্রেমের গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি। যার প্রেমের গল্প অর্থাৎ জীবনের গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি তিনি ও রয়েছেন সাথে।
শান্তঃ চলুন বন্ধুরা আমরা পরিচিত হয়ে আসি আমাদের আজকের অতিথি বন্ধুর সাথে।স্বাগতম বন্ধু আপনাকে আমাদের প্রোগ্রাম এ । বন্ধু, আপনার নাম ?
অর্ঘ ঃ আমার নাম নুবাঈদ আহমেদ অর্ঘ। আপনাদের ও অভিনন্দন ।
শান্তঃ উয়াও দারুন নাম। আচ্ছা কোন অর্থের নামটা আপনার? মূল্যবান নাকি পূজার উপকরন?
অর্ঘঃ মূল্যবান।
রিচিঃ চমৎকার ।কি করছেন ? পেশা কি ?
অর্ঘ ঃ আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স করছি ইসলামি ইতিহাস এ। একটা কথা বলতে চাই রিচি আপু তা হল আজকে এখানে আসার সুযোগ করে দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাদের দুজন কে। এবং কৃতজ্ঞতা জানাই রেডিও হাঙ্গামা কে । আজ এখানে আসতে পেরে নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে।
রিচি ঃ আপনাকে ও প্রানঢালা অভিনন্দন। আজকে আপনার জীবনে প্রেমের গল্প আমরা শুনব এবং একই সাথে দেশ বিদেশের হাজারো শ্রোতা আপনাকে শুনবে।
শান্ত ঃ শ্রোতা বন্ধুদের জন্য বলছি । বন্ধুরা, আজকে আমাদের সাথে রয়েছেন নুবাঈদ আহমেদ অর্ঘ ।তার জীবনের ভালবাসার গল্পটি শুনব আমরা। কি ?আপনারা রেডিতো?
আমাদের আজকের অতিথি সম্পর্কে জানতে চাইলে বা যেকোনো প্রশ্ন থাকলে আপনার মেসেজ অপশন এ গিয়ে লিখুন রেডিও হাঙ্গামা – আপনার নাম- ঠিকানা – আপনার কথাগুলো এবং পাঠিয়ে দিন ২৬২৬ এই নম্বরে।
রিচিঃ তাহলে এখন আমরা চলে যাচ্ছি অর্ঘ সাহেবের কাছে।তার জীবনের স্মৃতির পাতায় ।
অর্ঘঃ নিশ্চয়। আমি ছোটবেলা থেকে খুব দুরন্ত প্রকৃতির ছিলাম।খুব দুষ্টুমী করতাম।আমরা ছিলাম দুই ভাইবোন । আমি ছিলাম ছোট এবং আপু বড় ছিল। ছোট ছিলাম বলে সবাই খুব আদর করত। বাবার চাকুরীর সুবাদে ঢাকার যাত্রাবাড়ি তে বেড়ে উঠা। যাত্রাবাড়ির স্কুল কলেজেই আমার পড়াশুনা চলে।স্টুডেন্ট হিসেবে খুব একটা ভাল ছিলাম না আমি।আমার মনোযোগ বেশীরভাগ সময়ে দুষ্টুমীর দিকেই থাকত। ছোট থেকেই ভীষন দুষ্টু ছিলাম।আমাদের বিল্ডিং এর মোটামোটি সবাই জানত আমার দুষ্টুমীর কথা। তখন মনে হয় ক্লাশ ফাইভ কিংবা সিক্স এ পড়ি। দোতলায় এ পাশের ফ্ল্যাটের কেউ ই কলিং বেল বাজাতো না। এই বিষয়টা আমি খেয়াল করলাম। দেখলাম যে কলিংবেল থাকা সত্বেও কেউ বাজায় না। সকলেই দরজা নক করে ঘরে ঢোকে। মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপে।আমি ভাবলাম যেহেতু কেউ কলিং বেল ব্যবহার করে না তাহলে এটার ব্যাবহার তো করতে হয় ! যেই ভাবা সেই কাজ। আমি ৪ তলায় থাকতাম।আমি যতবার নিচে নামতাম এবং উপড়ে উঠতাম ততবার ই কলিং বেল প্রেস করে করে উঠতাম । ওনারা দরজা খুলে দেখে কেউ নেই । আমি ভীষন মজা পেতাম। এভাবে বেশ কয়েকদিন চলতে থাকে। একদিন একইভাবে আমি কলিং বেল প্রেস করতে যাচ্ছি ঠিক এমন সময় আঙ্কেল দরজা খুলেছে। প্রথমত খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভয়ে ভয়ে সালাম দিলাম। পরবর্তিতে বুঝতে পারলাম আঙ্কেল ব্যাপারটা বোঝেনি। তাকে জিজ্ঞেস করলাম আঙ্কেল আপনি কি নিচে যাচ্ছেন? আঙ্কেল সায় দিল। আমি বলেছি আমি ও তো নিচে যাচ্ছি চলেন একসাথে যাই ।
যাক এবারের মত বাঁচলাম । দু একদিন বেল বাজানো বন্ধ রেখেছি। তারপর থেকে আবারো শুরু করলাম।একদিন দেখি ওদের কলিং বেল আর বাজেনা। নষ্ট হয়ে গেছে !
সারাদিন কোন না কোন দুষ্টুমীর মধ্যেই কাটত সময়। আমি বেশ মজা পেতাম। আমাদের বিল্ডিং এর নিচতলায় থাকতেন এক হিন্দু আন্টি। তিনি প্রায় প্রতিদিন সন্ধায় পূজো সেরে দরজার সামনে প্রদীব জ্বালিয়ে রাখতেন। আমি খেলা সেরে যখন বাসায় ফিরতাম তখন তা দেখতাম। একদিন দুষ্টুমী বুদ্ধি মাথায় চাপল। সেদিন লক্ষী পূজোর এক সন্ধায় দরজার বাইরে প্রদীব জ্বালানো ছিল।আন্টির একটা অভ্যাস হল তিনি ৫/১০ মিনিট পর পর এসে চেক করেন প্রদীব জ্বলছে কিনা।
সেদিন প্রদিব জ্বালানো দেখে আমি ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিই।এবং গ্যারেজ এর পাশে লুকিয়ে থাকি। আন্টি ৫/৬ মিনিট পর দ্রজা খুলে দেখে প্রদীব নিভে গেছে। তাঁর মাথায় যথারীতি বাঁজ পড়ল যেন। তাড়াতাড়ি ম্যাচ এনে প্রদীব জ্বালিয়ে গেলেন। কিছুক্ষন পর আমি আবার নিভিয়ে দিই। তিনি ৫/১০ মিনিট পর এসে আবার জ্বালান। আমি কিছুক্ষন পর আবার নিভিয়ে দিই। তারপর ওনি প্রদীব ঘরেই নিয়ে যান। হয়ত বুঝতে পেরেছেন কী নিভিয়ে দিচ্ছে।
আমাদের এলাকায় আব্বু ও চাচ্চুদের খুব নাম দাক আছে। সবাই সম্মান করে।বাবা মা আমাকে নিয়ে ছোট থেকে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। আমার বড় আপু অনেক ভালো ছাত্রী।কিন্তু আমি বরাবর ই খারাপ ছাত্র ছিলাম।
এলাকায় অনেক বন্ধুবান্ধব ছিল আমার।বন্ধুরা মিলে খুব ফাইজলামী করতাম।রাস্তা দিয়ে কোন আঙ্কেল বা আন্টিকে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে যেতে দেখলেই শুরু হত আমাদের বাঁদরামী। একদিন বাতেন আঙ্কেল এর হাতে ৪ টা মিষ্টির প্যাকেট দেখেছি। আমরা ৮/১০ জন বন্ধু মাঠে ক্রিকেট খেলছিলাম।রাস্তা দিয়ে মিষ্টির প্যাকেট হাতে বাতেন আঙ্কেল কে যেতে দেখেই শুরু হল তাঁর পিছনে আমাদের ছুটে চলা। ইনিয়ে বিনিয়ে নানান কথা বলে,ছলে বলে কৌশলে তার হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেটগুলো নিয়ে দিলাম এক ভৌ দৌড়। সবাই যে যার মত মিষ্টি খেয়ে আমি অবশেষে পেলাম মাত্র ৪ টা। পরবর্তিতে বাতেন আঙ্কেল এর অবস্থা আমরা খেয়াল করিনি। সেদিন এর কার্যক্রমের জন্য বাসায় আমাকে অনেক শাস্তি পেতে হয়েছে। বাতেন আঙ্কেল আব্বুকে জানিয়ে দেয় ঘটনাটি। আব্বু আমাকে খুব মেরেছে সেদিন। টানা ১ মাস বাবা ফ্রিজে মিষ্টি এনে রেখেছিল কিন্তু ঐ মিষ্টি থেকে একটা মিষ্টি ও আমি ছুঁইনি।কারন এভাবে মিষ্টি খাওয়া টা আমার পছন্দ ছিল না। বাতেন আঙ্কেল কে ঠকিয়ে মিষ্টি খাওয়াটা অন্যরকম মজা ছিল।
একদিন একাদশ শ্রেনীতে থাকা অবস্থায় আম্মুর কাছে টাকা চেয়েছিলাম ।কিন্তু আম্মু দিতে রাজী হয় নি। আমি মাকে বলেছি“এখন তো আমাকে টাকা দিবা না কিন্তু যখন ছেলের বউ হবে বউ কে তো ঠিক ই টাকা দিবা।
হুম দিব ই তো
আচ্ছা তাহলে তুমি আমাকে দিবা ই না
না দিব না।
ওকে না দিলা
আমি আম্মুর উপর অভিমান করে বাইরে চলে যাই। ছোট কাকা কে বলেছি আম্মুর ড্রয়ার থেকে একটা শাড়ি লুকিয়ে লুকিয়ে নিয়ে আসতে। যেই কথা সেই কাজ। ছোট কাকার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল আমার।খোকন এর বাসায় ডাকল অন্যসকল বন্ধুদের। সবাই তো কান্ড দেখে কিছুই বুঝতে পারছিল না।
সবাইকে আশ্বাস দিয়ে বল্লাম আরে একটা মজা করব। দেখ আগে। সবাই দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। কথা অনুযায়ী সবাই কাজ করছে।সব বন্ধুরা মিলে আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে। নতুন বউ এর মত বড় করে ঘোমটা দিয়ে রেখেছে।বন্ধুরা তো ভীষন মজা পাচ্ছে।সবাই মিলে এখন বাসায় গেলাম।আর ছোট কাকা তো আগে থেকেই বাসায় গিয়ে কিছুই জানে না সেজে বসে আছে।
বাসার কলিং বেল বাজতেই মা এসে দরজা খুলল
ও মা তোমরা!
হুম আন্টি। আমরা এসেছি।
তা সাথে এই বউটা কে
আরে আন্টি এইজন্য ই তো আপনার কাছে আসছি
অর্ঘ তো বিয়ে করে ফেলছে
কি???? অর্ঘ বিয়ে করে ফেলছে?
হুম আন্টি। এই তার বউ।
মায়ের কথা শুনে ভেতর থেকে অর্গের কাকা,কাকী,বড় জ্যাঠা সবাই হাজির হল। সবার তো মাথায় হাত।কেমনে কি হল।অর্ঘ কাউকে কিছু না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে।সবাই হতভম্ব। এর মধ্যে পাশের ফ্ল্যাটের সবাই এবং নিচের ও উপরের তলার আন্টিরা হাজির হয়ে গেছে। সবাই কান্ড দেখছে।
কাকা কাকী বড় জ্যাঠা সবাই আমাকে খুজছে । বিয়ে করে অর্ঘ গেলো কই
এইদিকে বড় জ্যাঠা বাবা কে ফোন দিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বলে।হুলস্থুল কান্ড!
বন্ধুরা তো মনে মনে ভয় ই পাচ্ছে। তারপর তারা মাকে বলল আন্টি আমরা কিছুই জানিনা। অর্ঘ এসে বলল বউ নিয়ে বাড়ি আসার জন্য তাই আসলাম।
কিন্তু অর্ঘ কই?
জানিনা আন্টি। ও কোথায় যেন চলে গেছে
আর এইদিকে বড় ঘোমটা দিয়ে শাড়ি পড়ে আমি ভীষন মজা ্পাচ্ছি।
অনেকক্ষন ধরে তর্ক বিতর্ক চলার পর বড় জ্যাঠা ও আশে পাশের মানুষ যারা হাজির হয়েছিল সবাই বলেছে “যেহেতু বিয়ে হয়েই গেছে এখন মেনে নেয়া উচিত। যা হবার তা অর্ঘ আসলে হবে।বউ এর তো কোন দোষ নাই।
যথারীতী ঘরে প্রবেশ করল বউ।বউ মাকে আর বড় জ্যাঠা কে সালাম করে। তারা নতুন বউ কে ১০০০ টাকা দেয়।্নতুন বউ তো বেজায় খুশি। তার তো আর এখানে থাকতে ভালো লাগছে না।সে ঘোমটার ভেতর থেকে চুপি চুপি সদর দর্জার দিকে তাকায়।সবাই বউ এর চেহারা দেখার জন্য উদগ্রিব। আর এই দিকে বউ শাড়ি টা ভালো করে ধরে ,ঘোমটার পাড়টা দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে খোলা সদর দর্জা দিয়ে দিল এক দৌড়। সবাই তো অবাক হয়ে গেল। সবাই বলছে ঐ ঐ বউ দৌর দিছে বউ দৌর দিছে।বউ টাকা নিয়ে দৌড় দিছে।
আর এ দিকে বন্ধুরা সহ সবাই দৌড় দিল।
পরিবারের সবার বুঝতে বাকি নাই যে এটা আমার কান্ড।ছোট কাকা সবাইকে বলেছে যে এটা বউ ছিল না ।বউ সেজে অর্ঘ ই ছিল।
গল্প বলতে বলতে ফিরে এল স্টিডিও তে
রিচি ঃ হা হা হা হা হা অসম্ভব মজা পেলাম। ভাই আপনি একটা জিনিস বটে!
শান্ত ঃ অস্থির একটা ক্যারেকটার !!! বন্ধুদের কাছ থেকে আমরা হাজারো মেসেজ পেয়েছি। সবাই বলছে খুব খুব মজা পাচ্ছে, কেউ বলছে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাচ্ছে।
আমরা পরবর্তী তে চলে যাই।
অর্ঘঃ আমার শৈশব ,কৈশর এইরকম অনেক দুষ্টুমীর মধ্যে দিয়ে কাটে ।আমি যখন ধীরে ধীরে বড় হচ্ছি আমার কিছু বন্ধুদের দেখতাম ফোন এ খুব কথা বলত। তখন বড়জোর ক্লাশ সেভেন এ পড়ি।বন্ধুরা বিভিন্ন খারাপ ম্যাগাজিন ,পত্রিকা নিয়ে স্কুলে আসত।আমাদের দেখাত। বন্ধুরা মোবাইল এ প্রেম করত। তেমনি আমার ও মনে হল ফোন এ মেয়েদের সাথে কথা বললে কেমন হয়! খুব ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছিল। আমিও এক বন্ধুর মোবাইল দিয়ে ওদের সাহায্য নিয়েই আইরিন নামের এক মেয়ের সাথে কথা বলা শুরু করি। আমার নিসস্ব মোবাইল ছিল না। বন্ধুদের মোবাইল দিয়েই কথা বলি। কথা বলতে বলতে একদিন দেখা করলাম। মেয়েটা অনেক বেশী কালো ছিল। কিন্তু চেহারা টা খুব সুইট ছিল।দেখতে নাদুস নুদুস ছিল বড় বড় লাগত ওকে। দেখলে মনে হত নবম দশম শ্রেনীতে পড়ে।আইরিন এর সাথে কথা বলতে বলতে আমি কেমন যেন ওর উপর দুর্বল হয়ে যাই। সেও আমার প্রতি দুর্বল হয়ে যায়। তখন মাত্র সেভেন এ পড়ি। যেহেতু আমি খোকন এর মোবাইল দিয়ে কথা বলি সেহেতু খোকন ও মাঝে মাঝে আইরিন কে ফোন দিয়ে ওর সাথে আমি সেজে কথা বলত। ইমরান,গালিব,টিপু সবাই খুব মজা পেত। আমি এসবের কিছুই জানতাম না।
কিছুদিন পর আমি বেড়াতে গেলাম আমার ফুফুর শ্বশুর বাড়িতে। তাদের গ্রামের নামটা উহ্য ই থাক। ১৫/২০ দিন ছিলাম সেখানে। সেখানে গিয়ে দুইজন বন্ধু হয় আমার। একজন হল নাহিদ অন্যজন হল তুলিপ । তারা দুইজন আমার থেকে বয়সে বড়। তবে নাহিদ পড়াশুনা করত না। শুধু ঘুরে বেড়াত ।নাহিদ সিগেরেট খেত।তুলিপ ও মাঝে মাঝে টান দেয় সিগেরেট।ওদের টা দেখে আমার ও ঝোক চলে এসেছে সিগেরেট এর প্রতি।
ফুফুদের গ্রামে গিয়ে আমার খুব ভালো ই লাগছিল । ফুফুর মোবাইল দিয়ে আইরিন এর সাথে কথা বলা হত।
ফুফুদের পাশের বাড়িতে ঢাকা থেকে মেহমানরা বেড়াতে এসেছে। আমার ফুপাত বোন সাথীর সাথে ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা ঁজুই মিশত।জুঁই এবং ওর চাচাতো বোন ইভা আমার দিকে দূর থেকে তাকিয়ে থাকত।আমি তাকালেই চোখ ফিরিয়ে নিত। আমি যখন তুলিপ ,নাহিদ কে নিয়ে পুকুরে গোসল করতে যেতাম তখন জুই ইভা ও গোসল করতে আসত। জুঁই সাঁতার পারত না। একদিন গোসল করতে গিয়ে জুঁই পানিতে ডুবে যাচ্ছিল। ইভা জুইকে বাচানোর জন্য খুব চেষ্টা করছিল।সাথী ও দূর থেকে তা দেখে ছুটে আসে। ওরা কেউ ই পারছিল না। তাই আমি গিয়ে জুই কে উদ্ধার করলাম। সাথী ইভা আমাকে ধন্যবাদ দিল। পরে সাথী এই ব্যাপারটা নিয়ে আমাকে অপর্যস্ত করার চেষ্টা করেছিল।
জুই সেদিনের পর থেকে আমাকে দেখলে লজ্জা পেত।আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় জুই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখত। একদিন জুই তুলিপ কে ডেকে নিয়ে একটা চিরকুট দিয়েছে।সেখানে লেখা ছিল সে আমাকে ভালবেসে ফেলেছে। ভালবাসার কথা শুনে কার না ভাল লাগে। আমার ও লেগেছিল। পরের দিন পুকুর পাড়ে দেখা করলাম জুই এর সাথে। জুই এর সাথে পরিচয়ের পর কিছুদিন আইরিন কে ভুলেই গিয়েছিলাম। জুই আমাকে ওর আম্মুর ফোন নম্বর দিল। তখন আমাদের কারো মোবাইল ছিল না। আম্মুর মোবাইল দিয়েই আমরা কথা বলতাম।
গ্রাম বলে কথা। নাহিদ এর মাধ্যমে আমার আর জুঁই এর ব্যাপারটা গ্রামের সবাই জেনে যায়। আত্মীয় দের কাছ থেকে অনেক ধীক্কার সমালোচনা শুনতে হয় আমাদের। জুই খুব কষ্ট পায়। তারপর জুই তার বাবার সাথে ঢাকা নিজ বাসায় চলে যায়।আমিও আমার বাসায় চলে আসি।
জুই এর পরিবারে জুঁই কে খুব বকা দেয়। জুঁই খুব মেধাবী ছাত্রী ছিল।খুব পড়াশুনা করত।বাবা মায়ের স্বপ্ন পুরনে সে বদ্ধপরিকর।জুই আমাকে খুব ভালবাসত।আমিও প্রথম প্রথম তাকে ভালবেসেছিলাম।জুই প্রায় ই লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে ফোন দিত।আমি কথা বলতাম।আমি অকে খুব কম ফোন দিতাম। আমার ফোন পাওয়ার উদ্দেশ্যে জুই অধীর আগ্রহে বসে থাকত।আমার খুব কেয়ার করত সে। সারাদিন কি করছি,পরতে বসেছি কিনা ,খেয়েছি কিনা ইত্যাদি সবকিছু জানতে চাইত।আমি ওর সাথে দুষ্টু দুষ্টু কথা বলতাম। ও খুব লজ্জা পেত।
এদিকে বন্ধুদের সংস্পর্শে আমি একটু অন্যরকম হয়ে যাচ্ছিলাম।কেমন যেন কোন মেয়েদের প্রতি নেশা ছিল না। যাস্ট মেয়েদের সাথে ফাইজলামী করতাম। টাইম পাস করতাম। বন্ধুদের সাথে তাস ও খেলেছি আমি।
একদিন জুই এর চাচ্চু আমাকে ফোন দিয়ে অনেক গালাগালি করে। আমার প্রচন্ড রাগ উঠে যায়।এমনকি আমার আর জুই এর বিষয়টি আমার আম্মুকে জানিয়ে দেয়।আম্মু আমাকে শাসন করে খুব। স্কুলে যাওয়া ছাড়া আমাকে বের হতে দিত না। জুই এর চাচ্চুর উপর ভীষন রাগ উঠে আমার।জুই নাকি অর চাচ্চুকে বলেছে আমি অকে ডিস্তার্ব করি ও নাকি আমাকে ভালবাসেনা। এই কথা শুনে আমি এলাকার বাজে ছেলেদের কাছে জুই এর ফোন নম্বর ছড়িয়ে দিই। তাছাড়া আমার বন্ধুরা খোকন, ইমরান, টিপু, গালিব, টুটুল সবাই ই বিভিন্ন ফোন নম্বর থেকে জুই কে ডিস্টার্ব করত। টুটুল প্রেম করার ও চেষ্টা করেছিল।
জুঁই আমার ফোন এর অপেক্ষায় বসে থাকত। আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফোন থেকে ফোন দিতাম বলে অচেনা সব ফোন নম্বর এর ফোন রিসিভ করত সে। এভাবেই আমার বন্ধুদের সাথে কথা বলত।ও জানত না আমরা সবাই মিলে যে ওর সাথে ফাইজলামী করছি।ওরা জুই কে বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা জিজ্ঞেস করলে আমার নাম বলত সে। অথচ আমি ওকে কোন পাত্তা ই দিই না।
আমার বাসার টিচার এর নাম ছিল রাফি। একদিন আমি ই জুই কে ভাইয়ার ফোন নম্বর দিয়েছিলাম।রাফি ভাইয়ার ফোন এ একদিন জুই ফোন দিয়ে খুব কান্নাকাটি করে। ভাইয়া জুই কে খুব বোঝায় যে তোমরা ছোট। আগে বড় হউ তারপর এসব ভেবো। কিন্তু জুই কিছুতেই বুঝতে চায়নি।ও স্যারকে অনুরোধ করে আমি যেন একটি বারের জন্য হলেও অকে ফোন দেই কিন্তু আমি আর ওকে ফোন দেই নি।
জুই মেধাবী ছিল। এসএস সি ,এইচ এস সি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে। আমি অন্য মাধ্যমে জেনেছি। আমরা বন্ধুরা বরাবর ই খারাপ ছাত্র ছিলাম। হেডমাস্টার স্যার এর হাত পা ধরে এক ক্লাশ থেকে উপরের ক্লাশে উঠতাম। এসএস সি পরীক্ষায় কোনমতে পাশ করেছি। আমাদের বন্ধু টিপু খুব ভাল রেজাল্ট করে।
আরেকটা প্রেমের কথা। আমার বন্ধু সাব্বির ডালিয়া নামের এক মেয়ের সাথে প্রেম করত। ডালিয়ার এক বান্ধুবী ছিল নুরিন। ডালিয়া এবং নুরিন দুজন ই সুন্দর ছিল। সাব্বির ডালিয়ার সাথে দেখা করতে গেলে আমি সাব্বিরের সাথে এবং নুরিন ডালিয়ার সাথে আসত। এভাবে কয়েকদিন দেখা করেছি আমরা। একদিন নুরিন এর ফোন নম্বর চাইলে ও আমাকে দিয়ে দিল। সাব্বির ডালিয়ার সাথে কথা বলত আর আমি ও টাইম পাস করার জন্য নুরিন এর সাথে কথা বলা শুরু করি।নুরিনকেও আমি পটিয়ে ফেলি। আমার সাথে যেই মেয়ে ই কথা বলত সেই ই আমার প্রোপজাল এ রাজি হয়ে যেত। দেখা হত, আড্ডা হত,নুরিন এর সাথে আমার সময়টা খুব ভালো কেটেছে,রোমান্টিং কেটেছে। একদিন নুরিন ফোন এ জানাল যে ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আমাকে ছাড়া ও কাউকে বিয়ে করবেনা । তাই আমাকে বলে ওকে বিয়ে করার জন্য। কিন্তু আমি তো ছোট। এই বয়সে তো আর বিয়ে করা যায় না। তাই আমি ওর ফোন কেটে দিয়ে সিম ভেঙ্গে ফেলি। আমি আর তার সাথে যোগাযোগ করিনি। এমন কি সাব্বির এর সাথেও যোগাযোগ রাখিনি।আমার কষ্ট ই লাগছিল বটে। তবুও এমন পরিস্থিতিতে আমার আর কিছুই করার ছিল না। মনের কষ্ট দূর করার জন্য নতুন সিম কিনে রিয়াদ কে ফোন দিলাম।রিয়াদ তার এক্স গার্লফ্রেন্ড শারমিন নামের একটি মেয়ের ফোন নম্বর দেয়। ফেইসবুকেও শারমিনের সাথে আমার কথা হত। খুব কৌশলে শারমিন কে প্রেমে ফালালাম। শারমিন ছিল অন্যটাইপের। অনেক দুষ্টু ছিল । সবসময় আমি ওর পেছনে টাকা খরচ করতাম। কিছু হলেই টাকা চাইত। ২/৩ মাস রিলেশনের পর তার সাথে ব্রেকয়াপ হয় আমার।
আমি ছোটবেলা থেকে আম্মুর কাছ থেকে নানা প্রয়োজন দেখিয়ে টাকা নিতাম। প্রয়োজনের অধিক টাকা নিতাম। বন্ধুদের সাথে মিশে খরচ করতাম। আমার বন্ধু ইমরান,গালিব,টুটুল ,টিপু ,খোকন সবাই ভালো হয়ে গেছে। সবাই আগের মত নেই। পড়াশুনায় মনোযোগ দিয়েছে।আমার সাথে আগের মত মিশে না।রিয়াদ,তুষার আর আমি ই একটু খারাপ পথে আছি। এলাকার নানান ঝামেলায় জড়িয়ে যাই আমরা। এলাকায় এক বিরাট ঝামেলা করেছিলাম বলে আব্বু,চাচ্চু,বাসার সবাই আমাকে খুব শাসন করে। আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম টিপুদের মত আমিও পড়াশুনায় মনোযোগ দিব। হঠাত একদিন শুনলাম তুষার কে কে বা কারা যেন মেরে ফেলেছে, সেদিন খুব কান্না করেছিলাম আমি। খুব কেঁদেছিলাম।
তুষার এর মৃত্যুর পর এলাকা থমথমে হয়ে যায়। আমিও ভালো পথেই চলছিলাম। একা ই চলতাম এলাকায়। এলাকার ছোটরা আমার সাথে মিশতে আসত। ওরা আমার সাথে মিশে মজা পায়।আমি এখন পড়াশুনা,কলেজ এবং আম্মু কে নিয়েই ব্যাস্ত থাকি।মাঝে মাঝে বাইরে গেলে আমার সাথে গল্প করতে আসে মাহিদ নামের এক ছোট্ট ছেলে। ক্লাশ ৫ এ পড়ে। একদিন মাহিদ আমাকে তার বাসায় নিয়ে যায়। আমি যেতে না চাইলেও সে আমাকে তার বাসায় নিয়ে যায়। বাসার দরজায় পা রাখতেই দেখি একটি অদ্ভুত সুন্দর মেয়ে। আমি কিছুতেই চোখ সরাতে পারছিলাম না। বেশীক্ষন ওখানে না থেকে বাসায় চলে আসি। বাসায় এসে ও মেয়েটাকে ভুলতে পারছিনা।
পরদিন মাহিদ কে জিজ্ঞেস করলাম মেয়েটা কে ছিল । মাহিদ বলেছে “ আমার বড় আপু। মাহিনূর তার নাম, সবাই মাহি বলেই ডাকে।
আমি এরপর থেকে মাহিদ কে চিপস,চকোলেট কিনে দিই।মাহিদ খুব খুশী হত। আমি বেশ কিছুদিন মাহি কে ফলো করলাম। ও যখন স্কুলে যেত আমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতাম।ও যখন স্কুল থেকে বাসায় ফিরত তখন ও দাঁড়িয়ে থাকতাম।প্রায় প্রতিদিন বিকেলে মাহি দের বাসার সামনে যেতাম।কোনো কারন ছাড়াই যেতাম।একদিন বাসার দরজায় নক করতেই মাহি দরজা খোলে।আমি প্রথমে ভেবে পাচ্ছিলাম না কি বলব? হঠাত জিজ্ঞেস করলাম
মাহিদ বাসায় আছে?
না নেই।খেলতে গেছে। মাহিদ তো আপনার সাথেই থাকার কথা।
না আমার সাথে তো আজ দেখা হয়নি। তাই তো ডাকার জন্য এলাম।
ও তাই বলেন
আচ্ছা এক গ্লাস পানি হবে?
হুম। দাড়ান নিয়ে আসি
(পানি নিয়ে এসে) এই নেন পানি
বাইরে দাঁড়িয়ে খাবো? নাকি ভেতরে আসতে বলবা?
আচ্ছা ভেতরে আসুন।
আমি ভেতরে গিয়ে বসলাম। সেদিন ওর আম্মু বাসায় ছিল না।তাই আমি কথা বলার সুযোগ পেয়েছি।
আচ্ছা ঘরে কি লেবু আছে?
হুম আছে।
তাহলে দাও। সাথে একটু চিনি নিয়ে এসো
কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে ,আচ্ছা
আমি মনে মনে ভাবছিলাম কিভাবে ওকে আমার পছন্দের কথা জানাব ।অবশেষে মাহি লেবু আর চিনি নিয়ে আসলে আমি শুধু পানি খেয়েই ওকে বলে ফেলি তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি। তুমি কি আমাকে ভালবাসবে? তোমার উত্তর টা আমাকে জানিও। বাই
আমার ফোন নম্বর একটা কাগজে লিখে টি টেবিল র কাছে রেখে এসেছি। মাহিদ এর কাছ থেকে ওদের বাসার ফোন নম্বর নিয়েছি।
ফোন দিলে আন্টি ফোন ধরলে আমি মাহিদ আছে কি না জানতে চাইতাম। মাহি ফোন ধরলে তার উত্তর এর কথা জানতে চাইতাম।
দুই সপ্তাহ পরের কথা। দিনটা ছিল ১৪ ই ফেব্রুয়ারী।মাহিদ স্কুলে যাওয়ার আগে আমাকে এসে একটা কাগজ দিয়ে যায়। সেখানে কি আছে মাহিদ তা জানে না। খুলেও দেখেনি। সেটা দেখে আমি খুব খুশী হয়েছিলাম। লেখা ছিল মাহি আমার প্রস্তাবে রাজী হয়েছে। সেদিন এর আনন্দের কথা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।মনে হয়েছিল পৃথিবীর বুকে আমি একমাত্র সুখী ব্যক্তি।মাহির সাথে আমার রিলেশন শুরু হল। মাহিকে নিয়ে ঘুরতে গেলাম,রেস্টুরেন্ট এ খেলাম। শাড়িতে মাহিকে দারুন লাগছিল। অন্যরকম কেটেছিল দিনটা।
মাহির সাথে সম্পর্কের শুরু থেকে আমি খুব সিরিয়াস ছিলাম।মাহী ও সিরিয়াস ছিল। আমরা প্রচুর দেখা করতাম ।ফোনেও কথা বলতাম। কিছুক্ষন কথা না বলতে পারলে অস্থিরতা কাজ করত। মাঝে মাঝে রাত ১১ টার পর মাহিদের বাসার ছাদে চলে যেতাম। আন্টি ঘুমিয়ে পড়লে মাহি ও ছাদে চলে আসত।আমি আর মাহি দুজনে মিলে চাঁদ দেখতাম।রাতের আকাশের তারা গুনতাম।মাহী আমাকে আকাশ দেখতে চিনিয়েছে।আকাশের মেঘ চিনিয়েছে সব চিনিয়েছে। মাহি আকাশ খুব ভালবাসত। ছাদে একটা বসার স্থান ছিল। সেখানেই আমরা বসতাম। গল্প করার সময় মাহি আমার কাঁধে মাথা রেখে প্রশান্তি অনুভব করত।ও কাধে মাথা রাখলে আমি ওর কপালে চুমু খেতাম। অনেক রোমান্টিকতার মধ্যে দিয়ে কাটে দিনগুলো।
আমার প্রতিটা মুহুর্তের খোজ খবর রাখত সে। আমি খেয়েছি কিনা,ঘুমিয়েছি কিনা,পড়েছি কিনা ইত্যাদি সব।
সকাল ৭.৩০ এ মাহীর কোচিং ছিল। আমি তাই ঘুম থেকে ভোরে উঠে দাড়িয়ে থাকতাম ওকে দেখার জন্য। ও খুব বকা দিত। কিন্তু তবুও দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগত।ওকে দেখতে ইচ্ছে হত।
এভাবে ৮ মাস চলে গেল। অক্টোবর মাস চলে এলো। দিনগুলো খুব ভালো কাটছে। আর কিছুদিন পর মাহির বার্থডে।২৫ শে অক্টোবর মাহির জন্মদিন।এদিকে কিছুদিন যাবত মাহীর আম্মু অসুস্থ।প্রেসার বেড়ে গেছে। ডায়াবেটিস দেখা দিয়েছে।মাহির বাবা দেশের বাইরে থাকে।মাহীর আম্মু কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় ম,আহি। সব দায়িত্ব মাহির উপর ই।
অক্টোবর এর ২৪ তারিখে সন্ধ্যা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত সময় টা মাহীর সাথে কেটেছে।মাহি বার বার জানতে চাচ্ছিল আমি তাকে কতটা ভালবাসি। আমি কিছুতেই বোঝাতে পারছিলাম না ভালবাসার পরিমাপ হয়না। মাহি আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার বুকে মাথা রেগে বলেছিল “তুমি আমাকে কখনো ভুলে যাবে না তো” আমি বলেছিলাম “না যাব না “
কাল মাহির বার্থডে। কিন্তু কাল ই আন্টিকে নিয়ে হাসপাতাল এ যেতে হবে তাকে। আমার মন চায় নি মাহি কাল হাসপাতাল এ যাক।তবু অ যেতে অনুমতি দিলাম।
কথামত সকালে মাহি আন্টিকে নিয়ে হাসপাতাল এ চলে গেল।এদিকে আমি পুরো বাসা সাজিয়ে রেখেছি। কেক এনে ফ্রিজে রেখে দিয়েছি। মাহির জন্য ওর পছন্দের পার্পেল রঙ এর শাড়ি কিনেছি। মাহিদ এবং আমি খুব খুশি যে মাহি এলেই আমরা সারপ্রাইজ দিব। আমি রিতিমত ওদের পরিবারের একজন ই হয়ে গেলাম। আন্টি আমাকে খুব আদর করত।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল ,বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হল। আমার খুব টেনশন হচ্ছে মাহির জন্য।আমি অধীর আগ্রহে বসে আছি ওর প্রতীক্ষায়।
তার কিছুক্ষন পর এলাকার এক ছোট ভাই দৌড়ে এল।তাকে খুব অস্থির দেখাচ্ছে
অর্ঘ ভাইয়া.........
কিরে কি হল তোর?
এইদিকে আসো। তারাতাড়ি আসো।
না মাহি আসবে এখন, আমি যাব না।
(কান্না করে বলে)ভাইয়া ঐ যে অইদিকে দেখো
আমি তাকালাম।মূহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম।আন্টি বিলাপ করে কাঁদছে। গাড়ি থেকে সাদা কাপরে প্যাচানো একটা লাশ দেখে আমি কিছুক্ষনের জন্য পাথরের মত হয়ে গেছি।
এইরকম তো কথা ছিল না। কেন এমন হল বলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না। আমার বুক ফেটে চোখ ফেটে কান্না ঝড়ছে। আন্টির কাছে জানতে পারলাম যাত্রী ছাউনিতে তাকে বসিয়ে রেখে রাস্তার ওপাড়ে সি এন জি ভাড়া করতে গেলে এক ট্রাকের ধাক্কায় এই দূর্ঘটনা ঘটে।
মাহিদ লাশ কে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে।যদিও লাশ টা চুর্ন বিচুর্ন ছিল।
পুরো বাড়ি সাজানো। কেক রেডি।সন্ধ্যায় এসে মাহির কেক কাটার কথা ছিল অথচ মাহী সারা জীবনের জন্য আকাশে চলে গেল।
আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।কান্নায় লাশের দিকে তাকাতে পারিনি।আমিতো মাহীকে এভাবে দেখতে চাইনি।কেনো এমন হল কেনো? চিতকার করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আকাশ কে জিজ্ঞেস করেছিলাম।
পরক্ষনে আম্মু আসলো সেখানে।আম্মু আমাকে ধরে কাদছে।খুব কাদছে।আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বার বার বলছিলাম আমি কি নিয়ে বাঁচব? কি নিয়ে বাঁচব?
রিচিঃ আমি বাকহীন হয়ে গেছি।আসলে নিয়তি বড় একটা বিষয়। উপর ওয়ালার উপর কারো হাত থাকেনা।
শান্তঃআমার চোখে পানি চলে এসেছে। অর্ঘ সাহেব আর কাদবেন না প্লিজ। একটু শান্ত হোন !
রিচিঃ আমরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিনা। তবু ও অর্ঘ সাহেব একটু স্বাভাবিক হোন।
অর্ঘঃ মাহির মৃত্যুর আজ দু বছর হল।মাহি চলে যাবার পর থেকে আমি খুব একা হয়ে গেছি।জীবনে এত্ত কষ্ট আমি পাইনি। কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না।আমি এখন সারারাত আকাশ দেখি আর কাঁদি । আকাশের মাঝে মাহী কে খুঁজার চেষ্টা করি। এরপর আমি আগে যা যা করেছি তার জন্য খুব অনুতপ্ত হই। আমি জুঁই কে ফোন দিয়েছিলাম সরি বলার জন্য। নুরিন কে ফোন দিয়েছিলাম সরি বলার জন্য।কিন্তু ফোন দিয়ে কান্নায় আর কথা বলতে পারিনি।ফোন কেটে দিয়েছি। জুই,নুরিন,শারমিন।রাশেদা তোমরা যদি আমাকে শুনে থাকো তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করো।
শান্ত ঃ নিশ্চয় তারা আপনাকে ক্ষমা করবেন। আমরা বন্ধুদের কাছ থেকে অসংখ্য মেসেজ পেয়েছি। সময়ের স্বল্পতার কারনে পড়তে পারছিনা বলে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
রিচিঃমানুষের জীবন বৈচিত্র্যময়। আমরা আজ অসম্মভব হৃদয়কাড়া বাস্তবিক কাহিনী শুনলাম। উপর ওয়ালার ইচ্ছার উপর কারো হাত থাকেনা।সত্যি ই আমরা আজ শোকাহত মাহির মৃত্যুর কারনে। আল্লাহ মাহিকে জান্নাত বাসী করুক । আমীন!
শান্ত ঃ আমীন।
শান্ত ও রিচি ঃআজ এই পর্যন্ত ই। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আপনার জীবনের গল্পটি লিখে পাঠান আমাদের ঠিকানায়। আল্লাহ হাফেজ ।
৩১ মার্চ - ২০১৪
গল্প/কবিতা:
৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪